শুদ্ধশব্দ

শুদ্ধশব্দ একটি বাংলা স্পেলচেকার। এটি ডেভালপ করা হয়েছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড অ্যাড-ইন হিসেবে। এর শব্দভাণ্ডারে রয়েছে ১, ০৬, ০০০ এরও বেশি শব্দ যা সম্পূর্ণ আধুনিক বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে প্রণীত । স্পেলচেকারটি এই স্বল্প পরিমান শব্দ দিয়েই বাংলায় সম্ভব এমন কয়েকশো কোটি শব্দ নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করতে পারে। ভুল হিসেবে চিহ্নিত শব্দর সম্ভাব্য সঠিক শব্দের পরামর্শ তালিকা তৈরি করতে স্পেলচেকারটি ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, শব্দের সম্পাদনার দূরত্ব, ব্যবহারকৃত কিবোর্ড এবং ব্যাকরণসহ আরও অনেক বিষয়াদি বিবেচনা করে। পরামর্শের তালিকা প্রণয়নের পর সেগুলিকে আবার নৈকট্যের মাত্রা অনুসারে সাজায়। পরামর্শ তালিকা সাধারণত যথা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখা হয়।

বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০১০

আধুনিক বাংলা বানানের প্রচলন ও কম্পিউটার প্রযুক্তি: একটি নতুন সম্ভাবনা

এক সময় ছাপানোর জন্য বাংলা বর্ণমালা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা ছিল। সমস্যা সমাধানকল্পে কেউ কেউ যুক্তাক্ষর ভেঙে লেখার মতো চেষ্টাও করেছিলেন তবে সেইসব চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। কিন্তু কম্পিউটারে বাংলা বর্ণ প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা সৃষ্টির সাথে লিপি সংক্রান্ত অনেক জটিলতা খুব সহজেই সমাধান হয়ে গেছে। বানান সংক্রান্ত অসংহত এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা নিরসনের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার আমাদের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ হতে পারে। কম্পিউটার মানুষের মতো বিজ্ঞ না হলেও সে গাণিতিক ক্রিয়ায় পরিশুদ্ধ এবং মানবিক ভুল মুক্ত।

মুদ্রণের কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার মুদ্রণ শিল্পে বিপ্লবের সৃষ্টি করেছে। এখন ছাপার প্রিপ্রেস কাজের জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে সর্বত্র। অর্থাৎ প্রতিটি মুদ্রিত কাগজই কম্পিউটার দ্বারা প্রক্রিয়াকৃত। ছাপার প্রক্রিয়ার এই কম্পিউটার নির্ভরতা বাংলা বানানবিধি প্রয়োগের জন্যও একটি সুযোগ।

আমরা ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় কম্পিউটারে স্পেলচেকার ব্যবহার হতে দেখেছি। স্পেলচেকারে একটি শব্দভাণ্ডার থাকে যার সাথে সে প্রক্রিয়াকৃত প্রতিটি শব্দ মিলিয়ে দেখে। যদি শব্দটি শব্দভাণ্ডারে না থাকে তবে শব্দভাণ্ডার থেকে সম্ভাব্য শব্দের একটি পরামর্শ তালিকা তৈরি করে। ব্যবহারকারী এই পরামর্শ তালিকা থেকে বানানটি শুদ্ধ করতে পারেন অথবা পুনরায় টাইপ করতে পারেন অথবা বানানটি যেরূপ রয়েছে সেরূপ রেখে দিতে পারেন। এর ফলে ব্যবহারকারী প্রতিটি বানান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। বাংলা ভাষায় স্পেলচেকার দ্বারা আমরাও বানানের শুদ্ধতা নিরূপণের জন্য কম্পিউটারে সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারি। আমরা যদি স্পেলচেকারকে একটি নির্দিষ্ট বানানবিধি অনুসারে উন্নয়ন করি তবে তা কম্পিউটারে প্রক্রিয়াকৃত বাংলা ডকুমেন্টের সকল বানান একটি সুসংহত রূপে নিয়ে আসতে পারবে। ফলে মানবিক সীমাবদ্ধতার কারণে বানানের নিয়ম রক্ষা করে মুদ্রণকার্য সম্পন্ন করার যে অসুবিধা রয়েছে তা আর থাকবে না। অর্থাৎ টাইপসেটিংয়ের সংক্রান্ত সমস্যার মতো মুদ্রণের সময় বানান নিয়ে আমাদের যে ব্যাপক অসুবিধা রয়েছে সেটাও কম্পিউটারের সাহায্যে দূরীভূত করা যাবে বলে আশা করা যায়।

বানানবিধি প্রণয়ন অপেক্ষা বানানের বিধানসমূহ সকলকে দিয়ে ব্যবহার করানোটাই সবচে বড় অসুবিধা। আমাদের প্রথমেই খুঁটিয়ে দেখতে হবে বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই অসুবিধার মূল কারণসমূহ। প্রণীত বানানবিধি মানা হয় না কারণ আমরা সকলেই বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে বানানের বিধানটি অধ্যয়ন করার মতো সময় ও সুযোগ করতে পারি না। বানানবিধিতে যে নিয়মগুলি উল্লেখ থাকে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে কোন শব্দের বানান কীরূপ হবে তা নির্ধারণ করা সহজ নয়। ফলে বানান বিধান অধ্যয়ন করেও যে আমরা সঠিকভাবে বানান লিখতে পারব তা নয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সব সময় অভিধান খুলে দেখাটাও আমাদের জন্য অসুবিধাজনক । বিধায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা যা জানি যা বুঝি তাই লিখে উদ্ধার হতে চাই। অর্থাৎ সমস্যার মূলে হলো প্রণীত বানানের বিধান ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সহজ কোনো উপায় নেই। যার ফলে ইচ্ছে করলেই আমরা আধুনিক বানানবিধি অনুসারে লিখতে পারি না। এক্ষেত্রে আমাদের বানান বিষয়ক সংস্কারের বিষয়টি বাদ দিলাম কারণ বানান সংক্রান্ত সংস্কার সৃষ্টি হয় ভূত সংক্রান্ত সংস্কারের মতো অপরজনের কারণে।

বানান সংক্রান্ত অভ্যাস গড়ে ওঠার বড় নিয়ন্ত্রক হলো পাঠ্যবই, সংবাদপত্র, বিভিন্নরকমের বই ও মুদ্রিত কাগজপত্র। এই সব ছাপার কাজে একটি আধুনিক বানানের বিধান অনুসারে স্পেলচেকার ব্যবহার হয় তবে আধুনিক বাংলা বানানবিধি প্রয়োগের জন্য খুব সহজ একটি উপায় হবে। সাধারণ শিক্ষিত মানুষ যে ভাষাবিজ্ঞানিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রণয়নকৃত আধুনিক বানান পদ্ধতির প্রতি অশ্রদ্ধাশীল তা - সমস্যা হচ্ছে এই পদ্ধতি প্রয়োগের সহজ উপায়। অধিকাংশ মুদ্রিত কাগজপত্রে যদি বানানবিধির প্রয়োগ ঘটে তবে বানানবিধির বানানগুলির সাথে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। ক্রমে চোখে দেখা বানানগুলি কলম দিয়ে লিখতেও শুরু করবে এবং পুরোনো বানানগুলিকে ভুল বলে প্রতিভাত হবে। ভাষাবিজ্ঞানিরা তখন আমাদের জন্য আরও প্রয়োজনীয় কিছু ভাবার অবসর এবং সাহস পাবেন।

স্পেলচেকার প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার আধুনিক বাংলা বানানবিধির পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রয়োগ নিশ্চিত করে আমাদের বাংলা বানানকে একটি সুসংহত রূপ প্রদানে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন